HSC 2021 Islamic History Assignment Answer All Week

 এইচএসসি ২০২১ ১ম সপ্তাহের -ইসলামের ইতিহাস এসাইনমেন্ট নং ১


ক) প্রাক ইসলামিক যুগে শহরবাসী এবং মরুবাসী আরবদের আর্থসামাজিক জীবনযাত্রা:-


ভূ-প্রকৃতির তারতম্য অনুসারে আরবের অধিবাসীদের দু-শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়- শহরের স্থায়ী বাসিন্দা ও মরুবাসী যাযাবর যারা বেদুইন নামে পরিচিত। এ দুশ্রেণীর আচার-ব্যবহার, জীবনযাত্রা প্রণালী, ধ্যান-ধারণা, আশা-আকাঙক্ষার মধ্যে যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। অনেক মরুবাসী আরব বেদুইন জীবন ত্যাগ করে শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু। অপরদিকে দারিদ্রের কষাঘাত সহ করতে না পেরে কিছুসংখ্যক স্থায়ী বাসিন্দা বাধ্য হয়ে যাযাবর বিতি গ্রহণ করে।

ক) শহরবাশি: আরবের উর্বর তৃণ অঞ্চলগুলো স্থায়ীভাবে বসবাসের উপযোগী বলে অসংখ্য জনপদ গড়ে উঠেছে। কৃষিকার্ ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রবৃদ্ধি ছিল স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা। বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগের রক্ষা করার ফলে এরা ছিল মরুবাসী বেদুইনদের তুলনায় অধিকতর রুচিসম্পন্ন মরর্জিত।

খ) মরুবাশি: আরব অধিবাসীদের অধিকাংশ স্বাধীনচেতা, বেপরোয়া ও দুর্ধর্ষ বেদুইন। সমাজের ধরাবাঁধা শৃংখলে আবদ্ধ হই স্থায়ীভাবে শহরে বসবাস করার প্রবৃত্তি বেদুইন জীবনধারণের জন্য মরুভূমির সর্বত্র ঘুরে বেড়াতো। তারা চীনের সন্ধানে এক পশুচারণ হতে অন্য পশুচারণ গমন করতে। শহরবাসী ও বেদুঈনের মধ্যে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ ছিল নিত্য নৈতিক ঘটনা।


 আর্থসামাজিক উন্নয়নে শহরবাসী ও মরুবাসীদের মধ্যে পার্থক্য


শহরবাশি 

১। আরবের তৃণ অঞ্চলগুলো ব্যবসায় উপযোগী ছিল বলে অসংখ্য জনবসতি গড়ে উঠেছিল 

২ কৃষিকার্ষ ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি ছিল স্থায়ী বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা।

৩ বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য বেদুইনদের থেকে তারা ছিল প্রান্ত রুচিসম্পন্ন মার্জিত।

৪। একটি স্থানে দীর্ঘদিন বসবাস করার ফলে তারা ছিল সচ্ছল।


মরুবাশি

১। আরব অধিবাসীদের অধিকাংশ স্বাধীনচেতা, বেপরোয়া ও দুর্ধর্ষ বেদুইন। 

২। সমাজের ধরাবাঁধা শৃংখলে আবদ্ধ হই স্থায়ীভাবে শহরে বসবাস করার প্রবৃত্তি বেদুইন জীবনধারণের জন্য মরুভূমির সর্বত্র ঘুরে বেড়াতো।

৩। তারা চীনের সন্ধানে এক পশুচারণ হতে অন্য পশুচারণ গমন করতো।

8। শহরবাসী ও বেদুঈনের মধ্যে আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণ ছিল নিত্য নৈতিক ঘটনা


খ) প্রাক আরবের রাজনৈতিক অবস্থা?

ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থার বিশৃঙ্খলা পূর্ণ এবং হতাশাবঞ্জক ছিল। কোন কেন্দ্রীয় শক্তি নিয়ন্ত্রণ বা কৃতিত্ব না থাকায় আরবে গোত্র প্রধান ও লাভ করে। তাদের মধ্যে কোন ঐক্য ছিল না। গোত্র সমূহের মধ্যে সবসময় বিরোধ লেগে থাকত।

গোত্রীয় শাসন: অন্ধকার যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল বিশৃঙ্খলা ভিত্তিহীন ও নৈরাজ্যের অন্ধকারে ঢাকা। উত্তর আরবের বাইজানটাইন ও দক্ষিণ আরবের পারস্য প্রভাবিত কতিপয় ক্ষুদ্র রাজ্য ব্যক্তিত্ব সমগ্র আরব ছিল স্বাধীন এলাকা। সামান্য সংখ্যক শহরবাসী ছাড়া যাযাবর শ্রেণীর গোত্রগুলোর মধ্যে গোত্রপতির শাসন বলবৎ ছিল। গোত্র প্রতিভা শেখ নির্বাচনে শক্তি-সামর্থ, সাহস আর্থিক স্বচ্ছলতা অভিজ্ঞতা বয়স্কতা বিচারবুদ্ধির বিবেচনা করা হতো।

ভিন্ন গোত্রের প্রতি তার আচরণ শত্রু ভাবাপন্ন ছিল। শেখ এর প্রশাসনিক ব্যবস্থা রাজনৈতিক জীবন ধারার ছোঁয়া থাকলেও শক্তি ও নিরাপত্তা লেশমাত্র ছিল না।

গোত্র-দন্ধ: গোত্র কলাহলে বিষবাম্পে অন্ধকার যুগে আরব জাতি কুলুষিত ছিল। গোত্রের মান সম্মান রক্ষার্থে তারা রক্তপাত করতেও কুন্ঠাবোধ বোধ করত না। নবমীর পানির বর্ণা ও গৃহ পালিত পশু নিয়ে সাধারণত রক্তপাতের সূত্রপাত হত। কখনো কখনো তা এমন বিভাজিকার আকার ধারণ করত যে দিনের পর দিন নিয়ে যুদ্ধ চলতে থাকতো। আরবিতে একে আরবের দিন বলে অবহিত করা হতো। আরবের মধ্যে খুনের বদলা খুন অথবা রক্তের বিনিময় প্রথা চালু ছিল। তার মধ্যে বয়সের যুদ্ধ ফিচারযুক্ত ইতিহাসের প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছিল। উট ঘোড়া দৌড় পবিত্র মাসের অবমাননা কুৎসা রটনা করে ইত্যাদি ছিল এ সকল যুদ্ধের মূল কারণ। বেদুইনগণ উত্তেজনাপূর্ণ কবিতা পাঠ করে যুদ্ধের ময়দানে রক্ত প্রবাহে মেতে উঠতো। যুদ্ধপ্রিয় গোত্রগুলোর মধ্যে আউস,খাযরায, কুরাইশ, ভানু বকর, ভানু তাবলীগ, আবস ও জুবিয়ান ছিল প্রধান।


গ) প্রাক আরবের ধর্মীয় অবস্থা:-

জাহেলিয়া যুগে আরবদের ধর্মীয় অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় ও অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। আরবে তখন অধিকাংশ লোকই ছিল জড়বাদী পৌত্তলিক। তাদের ধর্ম ছিল পৌন্তলিকতা এবং বিশ্বাস ছিল আল্লাহর পরিবর্তে অদৃশ্য শক্তির কুহেলিকাপূর্ণ ভয়ভীতিতে। তারা বিভিন্ন জড়বস্তুর উপাসনা করত। চন্দ্র, সুর্য তারকা

এমনকি বৃক্ষ, রক্ষক, গুহাকে পবিত্র মনে করে তারা পুজা করত। প্রকৃতি পূজা ছাড়াও তারা বিভিন্ন মূর্তির পূজা করত। মূর্তিগুলোর গঠন ও আকৃতি পূজারীদের ইচ্ছানুসারে তৈরি করা হতো। পৌত্তলিক আরবদের প্রত্যেক শহর বা অঞ্চলের নিজস্ব দেবীর মধ্যে অন্যতম ছিল আল-লাত, আল-মানহা, আল-উজ্জা। আল-লাত ছিল তায়েফের অধিবাসীদের দেবী যা চার কোনার এক পাথর ছিল। কালো পাথরের তৈরি ভাগ্যের দেবীর মন্দির ছিল আল-মানহা । এ দেবির মন্দির ছিল মক্কা ও মদীনার মধ্যবিত্ত কুদায়েদ স্থানে। মদিনার আউশ ও খাজরাজ গোত্রের লোকেরা এদের জন্য বলি দিত এবং দেবী কে সম্মান করতো। নাখলা নামক স্থানে অবস্থিত মক্কাবাসীদের অতি প্রিয় দেবী আল উজ্জাকে কুরাইশগণ খুব গভীর শ্রদ্ধা করতো। 

আরবের বিভিন্ন গোত্রের দেব দেবতাদের পুজার জন্য মন্দির ছিল। এমনকি পবিত্র কাবা গৃহে ৩৬০ টি দেব দেবতাদের মুর্তি ছিল। কাবা ঘরে রক্ষিত মূর্তি দের মধ্যে সবচেয়ে বড় মূর্তি বা দেবতাদের নাম ছিল হোবল। এটি মানুষ্যাকৃতি ছিল –  এর পাশে ভাগ্য গণনার জন্য শর রাখা হত। 


ঘ) প্রাক আরবের সাংস্কৃতিক অবস্থা:-

বর্তমান যুগের নেয় প্রাক ইসলামী যুগে আরবের বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ও সংস্কৃতির না থাকলেও আরবরা সংস্কৃতি জীবন হতে একেবারে ভিন্ন ছিল না। তাদের ভাষা এত সমৃদ্ধ ছিল যে আধুনিক ইউরোপের উন্নত ভাষাগুলো সাথে তুলনা করা হতো। কবিতার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক চেতনাঃ প্রাক ইসলামী যুগে লিখন প্রণালী তেমন উন্নতি হয়নি বলে আরবগণ তাদের রচনা বিষয়বস্তু গুলো মুখস্ত করে রাখতো। তাদের স্মরণ শক্তি ছিল খুব প্রখর তারা মুখে কবিতা পাঠ করে শোনান তো কবিতার মাধ্যমে তাদের সাহিত্য প্রতিভা প্রকাশ পেত। এজন্য লোক গাঁথা লোকগাথা জনশক্তির জনশ্রতির উপর নির্ভর করে পরবর্তীকালে আরব জাতির ইতিহাস লিখিত হয়েছে। আরব সংস্কৃতির এঁতিহ্য বাহী প্রাচীন আর বিজ্ঞপ্তি ভাগ্যবতী কাব্য অথবা কাসিদা সমসাময়িক কালের ইতিহাস অতুলনীয়। 

উকাজের সাহিত্য মেলা: প্রাক ইসলামী যুগে আরবের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল তাদের বাগ্নিতা জিহবার অফুরন্ত রচনা শক্তির অধিকারী। প্রাচীন আরবের কবিরা মক্কায় আদুরে উকাজের বাৎসরিক মেলায় কবিতা পাঠের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতেন। উকাজের বাৎসরিক সাহিত্য সম্মেলন পঠিত ৭টি ঝুলন্ত কবিতাকে সাবা আল মুয়াল্লাকাত বলা হয়।

সাহিত্য আসরের আয়োজন:  তৎকালীন আরবের সাহিত্যচর্চায় আরবদের আগ্রহ ছিলো স্বতস্ফুর্ত। অনেক সাহিত্যমোদী আরব নিয়মিত সাহিত্য আসরের আয়োজন করতেন। সাহিত্য আসর এর উদ্যোক্তাদের মধ্যে তাকিব গোত্রের প্রধান ইবনে সালাম এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। প্রতি সপ্তাহে তিনি একটি সাহিত্য আসরের আয়োজন করতেন। 

কবিতার বিষয়বস্তু: প্রাক ইসলামী যুগের সাহিত্যিকগণ তাদের গোত্র ও গোষ্ঠীয় বীরদের বীরত্বপূর্ণ কাহিনী, যুদ্ধের বিবরণ, উটের বিস্ময়কর গুণাবলী, বংশ গৌরব অতিথিপরায়নতা, নর-নারীদের প্রেম, নারীর সৌন্দরয, যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কবিতা রচনার করতো। তাদের সকল কবিতা সুদূর অতীত কালের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি প্রাক-ইসলামি আরবের বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোকপাত করে।


ঙ) প্রাক ইসলামী যুগের উৎকৃষ্ট গুনাবলি:-

মরুভূমিতে রাত্রি ভীতিসংকুল, ভূত-প্রেত, দৈত্য দানবের আনাগোনা- এ সাধারণ বিশ্বাস মরুভূমির বিপদ থেকে পথিককে রক্ষা করার জন্য আরবদের মধ্যে অতিথিপরায়নতা বিকশিত করেছিল। মরুভূমি অনূর্বর ও পর্বতাঞ্চলের আরব সমাজ গোত্রভিত্তিক ছিল। গোত্র নিরাপত্তা ও বহিরাক্রমণের ভয় তাদেরকে গোত্র প্রিয় করে তুলেছিল। এ গোত্রপ্রীতি তাদের মধ্যে জন্ম নেয় মানুষ্যত্ব, আত্মসংযম স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের। শেখের নিকট সকল নাগরিকের অধিকার সমান। এরুপ পরিস্থিতিতে উন্নততর ধর্ম-কর্মে তাদের শিথিলতা পরিলক্ষিত হওয়াই স্বাভাবিক। আরব ভূখন্ডের অনুবাদ পরিবেশ খাদ্য ও পানীয় জলের অভাব, নিদিষ্ট চলাচলের পথ না থাকায় বৈদেশিক আক্রমণের হাত থেকে আরববাসীরা সবসময় নিরাপদ থেকেছে। 

ভৌগোলিক প্রভাবের কারণে শহরবাসী আরব ও মরুবাসী বেদুইনদের মধ্যে আত্মীয়-স্বজন ও আত্ম সচেতনতা ও কাব্য কাব্যিক সচেতনতার উন্মেষ ঘটে। আরববাসী ছিল কাব্যের প্রতি অধিক মাত্রায় অনুরক্ত। গীতিকাব্য রচনায় ও সাহিত্য চর্চায় আরবদের অপূর্ব সৃজনশীলতার পরিচয় পাওয়া যায়। আরব কবিগণ ভৌগোলিক পরিবেশে যে কাব্য রচনা করেন তা সংঘাত, অদম্য সাহসিকতা, বীরত্ব, গোত্রপ্রীতি ও প্রেম সম্পর্কিত।


 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *