HSC 2022 Sociology Assignment Answer 8th Week

HSC Sociology 8th Week Assignment 2022

HSC 2022 8th week Sociology Assignment ‍ selected from Chapter III. The title of the third chapter is the society and civilization of Bangladesh on the basis of archeology. In other words, the society and civilization of Bangladesh has been discussed from the HSC 2022 8th week Sociology Assignment. The contribution of important questions in the development of society and civilization of Bangladesh should be discussed as the work of HSC 2022 8th week Sociology Assignment. It is necessary to discuss all the archeological sites of Bangladesh which have played a special role in the development of the society and civilization of Bangladesh.

বিষয়: সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র, বিষয় কোড: ১১৮, স্তর: এইচএসসি, অ্যাসাইনমেন্ট নম্বর: ০২, তৃতীয় অধ্যায়: প্রত্নতত্ত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতা (আংশিক)।

অ্যাসাইনমেন্ট: বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থানের অবদান।

বিষয়বস্তু

  • ১. প্রত্নতত্ত্বের ধারণা ও এর উৎস ব্যাখ্যা করতে পারবে
  • ২. প্রত্নতত্ত্বের সময়কালের ভিত্তিতে সমাজের শ্রেণিবিভাগের ছক তৈরি করতে পারবে
  • ৩. বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থানের অবদান বর্ণনা করতে পারবে

নির্দেশনা

  • ক. প্রত্নতত্ত্বের ধারণা ও এর উৎস ব্যাখ্যা করতে হবে
  • খ. সময়কালের ভিত্তিতে প্রতত্ত্বের শ্রেণিবিভাগ করতে হবে
  • গ. বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে মহাস্থানগড়ের অবদান বর্ণনা করতে হবে
  • ঘ. বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে ময়নামতির অবদান বর্ণনা করতে হবে

HSC 2022 Sociology Assignment Answer 8th Week

শিরোনাম: বাংলাদেশের সমাজ ও সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নস্থানের অবদান।

(ক) প্রত্নতত্ত্বের ধারণা ও উৎস: 


প্রত্নতত্ত্বের ইংরেজি হচ্ছে ‘Archaeolog’। শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Arkhaios’ যার অর্থ ‘প্রাচীন’ এবং ‘Logia’ যার অর্থ ‘বিজ্ঞান’ থেকে। শব্দগত অর্থে ‘Archoeology’ হচ্ছে ‘প্রাচীন বিদ্যা’। অর্থাৎ অতীত যুগের মানুষের ব্যবহার্য দ্রব্যসামগ্রী। হাতিয়ার ইত্যাদির ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে সে যুগের মানুষের সামাজিক জীবনের অধ্যয়নই হলো প্রত্নতত্ত্ব বা পুরাতত্ত্ব। প্রত্নতত্ত্ব সেই যুগের মানুষের কথা আলোচনা করে, যার কোনো লিখিত ইতিহাস নেই। প্রত্নতত্ত্ব নৃবিজ্ঞানের একটি শাখা।

ই বি টেইলর ‘Dictionary of Anthroplogy’-তে বলেন, ‘Archoeology is the study of remains of the past’. অর্থ ‘প্রত্নতত্ত্ব হচ্ছে অতীতের ধ্বংসাবশেষ সম্পর্কিত পাঠ বা গবেষণা।’

ভূতত্ত্ববিদদের মতে, প্লেসটোসিন যুগ থেকে ভূ-পৃষ্ঠে মানুষের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিল বলে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে খননকাজ থেকে উদ্ধারকৃত এসব হাতিয়ার, তীর-ধনুক, বর্শা, ঘরবাড়ি, স্থাপত্য, তৈজসপত্র, আসবাব ইত্যাদি হলো প্রত্নতত্ত্বের উৎস। প্রত্নতত্ত্ববিদরা এসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানবসমাজ সম্পর্কে বর্ণনা দেন। প্রত্নতত্ত্ববিদরা নৃবিজ্ঞান, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ব, জীববিদ্যা, কঙ্কালবিদ্যা, নন্দনতত্ত্ব, তথ্য-প্রযুক্তি বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখার সাহায্য নিয়ে থাকেন।

(খ) প্রত্নতত্ত্বের শ্রেণীবিভাগ: 

সময়কালের ভিত্তিতে  প্রত্নতত্ত্বের শ্রেণীবিভাগ করা হলো,

  • ক) প্রাচীন প্রস্তর যুগ
  • খ) মধ্য প্রস্তর যুগ 
  • গ) নব্য প্রস্তর যুগ 
  • ঘ) তাম্য যুগ 
  • ঙ) ব্রোঞ্জ যুগ
  • চ) লৌহ যুগ 

সময়কালের ভিত্তিতে প্রত্নতত্ত্বের শ্রেণি বিভাগ সমূহের বিস্তারিত বর্ণনা:

প্রাচীন প্রস্তর যুগ
প্রাচীন প্রস্তরযুগ-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হল Paleolithic Age। গ্রিক শব্দ Palaeo (পুরো > পুরাতন) এবং Lithos  (পাথর) শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে Paleolithic/Palaeolithic শব্দটি গঠিত। এ যুগটি ছিল প্রস্তরযুগের প্রথম পর্যায়। প্রাগৈতিহাসিক এ যুগকে সময়ের হিসেবে সবচেয়ে দীর্ঘতম বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ থেকে ১৫ লক্ষ খ্রিস্টপূর্ব অব্দ পর্যন্ত প্রাচীন প্রস্তরযুগের সময়কাল বিবেচনা করা হয় তবে প্রয়োজনীয় প্রমাণাদি না পাওয়ায় আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদ ও ইতিহাস গবেষকেরা এ যুেগর সময়কাল সংক্ষিপ্ত করে ১ লক্ষ থেকে ১০ হাজার বছরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন। এ যুগে অবিকৃত, অমসৃণ ও স্থূল পাথরের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে। যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ থেকে দাবি করা হয়েছে যে, মানবসভ্যতার প্রাথমিক বিকাশ প্রাচীন প্রস্তরযুগ বা পুরোপলীয় যুেগই ঘটেছিলো।

মধ্য প্রস্তর যুগ
মধ্য প্রস্তরযুগ হচ্ছে প্রাচীন প্রস্তরযুগের প্রান্তিক পর্যায় এবং নব্য প্রস্তরযুগের প্রারম্ভিক পর্যায়। ইউরোপে এ যুগ প্রায় ১১ হাজার থেকে ৫ হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। আফ্রিকা, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন অঞ্চলে এ যুগের অনেক নিদর্শন আবিষ্কৃত হয়েছে। মধ্য প্রস্তরযুগে ইউরোপের তৃণভূমি বা তুন্দ্রা অঞ্চলে গভীর বন-বনানীর সৃষ্টি হয়। চতুর্থ বরফযুগের পরবর্তী সময়ে বেঁচে যাওয়া মানুেষরা নতুনভাবে প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম হয় এবং এরা মধ্যপলীয় সংস্কৃিতর জন্ম দেয়।

নব্য প্রস্তর যুগ
‘নব্যপ্রস্তর’ শব্দটি এসেছে ইংরেজি Neolithic প্রতিশব্দ থেকে। গ্রিক শব্দ Neo (নব > নতুন) এবং Lithos  (পাথর) এর সময়ে Neolithic শব্দটির উদ্ভব। বিখ্যাত ইংরেজ  প্রত্নতত্ত্ববিদSir John Lubbock ১৮৬৫ সালে প্রথম Neolithic শব্দটি ব্যবহার করেন। আনুমানিক ৮০০০–৩৫০০ খ্রিস্টপূর্ব অব্দের মধ্যে ও নিকট প্রাচ্যে নব্য প্রস্তরযুগের প্রথম বিকাশ ঘটে। অতঃপর ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং অবশেষে খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে ইংল্যান্ডে এ যুগের সূচনা হয়। সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতির ইতিহাসে নব্য প্রস্তরযুগ একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়। বিখ্যাত ইংরেজ ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড (Gordon Childe) খাদ্য-আহরণ পর্যায় থেকে খাদ্য উৎপাদনের জন্য কৃষিকাজে উত্তরণকে নব্য প্রস্তরযুগের বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

তাম্রযুগ
খ্রিস্টপূর্ব ৪০০০ অব্দের শেষদিকে ইউরোপে এবং নিকট প্রাচ্যে তাম্র যুগের সূচনা ঘটে। তাম্রযুগে প্রবেশের মধ্য দিয়ে নগরসভ্যতার সূচনা হয়। তবে তাম্র যুগে পাথরের ব্যবহার ও চলমান ছিল। তামার ব্যবহার ছিল সভ্যতার নতুন সংযোজন। এ অবস্থাকে তাম্রপলীয় যুগ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মানুেষর প্রথম ব্যবহৃত ধাতুহল তামা। ধারণা করা হয় যে, কৃষিযুগে মাটির হাঁড়ি-পাতিল পোড়াতে গিয়ে প্রথম তামা আবিষ্কৃত হয়। কারণ মালাকাইট (তামার আকর) পুড়লে তামা গলে আলাদা হয়ে বেরিয়ে আসে। প্রাচীন মিশর, সিরিয়া ও অ্যাসিরিয়ার অধিবাসীরা ব্যাপকভাবে তামার ব্যবহার জানত। বস্তুত সুমেরের নগরসভ্যতার গোড়াপত্তন হয়েছিল তামা ব্যবহারের মধ্যদিয়ে। তবে তামার দুষ্প্রাপ্যতা এবং এর কিছুকাল পর ব্রোঞ্জযুগের আগমনে তাম্রযুগ দীর্ঘায়িত হয়নি।

ব্রোঞ্জযুগ
মেসোপটেমিয়া, মিশর, ভারত এবং চৈনিক সভ্যতায় ব্রোঞ্জের আবিষ্কার হয়। ধীরে ধীরে ব্রিটেন, সুইডেন, ডেনমার্ক ও উত্তর জার্মানীতে এর বিস্তার ঘটে। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দ পর্যন্ত ব্রোঞ্জযুগ স্থায়ী হয়। ব্রোঞ্জযুেগ এসে নগরসভ্যতা আরো বিকশিত হয়। নগরায়নের ফলে শ্রমবিভাগের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। শ্রমবিভাগকে কেন্দ্র করে সমাজে পৃথক শ্রেণি বিভাজন ও স্তরবিন্যাস গড়ে ওঠে। ব্রোঞ্জযুেগ ব্যবসা–বাণিজ্যের প্রসার ঘটে। দ্রব্য বিনিময়ের পরিবর্তে ব্রোঞ্জের তৈরি মুদ্রা অর্থনীতির বিকাশ ঘটে। এ যুগে লেখা আবিষ্কৃত হয়। ফলে শিক্ষা ও জ্ঞানরাজ্যে নতুন যুগের আগমন ঘটে। ব্রোঞ্জ-নির্মিত বর্ম, শিরস্ত্রাণ, বর্শা, তলোয়ার ইত্যাদির ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়। সামন্ত রাজাগণ ব্রোঞ্জের অস্ত্রের সাহায্যে সজ্জিত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সামন্তরাজ্যগুলো আক্রমণ ও দখল করে নতুন নতুন উপনিবেশ স্থাপন করে।

লৌহযুগ
লোহার আবিষ্কার ও ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে ব্রোঞ্জযুেগর একচেটিয়া অধিকার ও  কর্তৃত্ব হ্রাস পেয়েছিল। ব্রোঞ্জ ছিল দুষ্প্রাপ্য ও মূল্যবান ধাতু। এর ব্যবহার মূলত অভিজাত শ্রেণির হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল। সহজলভ্য ও দামে সস্তা হওয়ায় লোহার ব্যাপক ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়। সাধারণ মানুষও তাদের দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে লৌহ নির্মিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে শুরু করে। এভাবেই লৌহযুগ নামে নতুন এক সভ্যতার বিকাশ লাভ ঘটে। এশিয়া মাইনরে হিট্টাইটরা প্রথম লোহার আবিষ্কার ও এর ব্যবহার শুরু করে। খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে মধ্যপ্রাচ্যে লোহার ব্যবহার শুরু হয়।

(গ) বাংলাদেশের সমাজ সভ্যতা বিকাশে মহাস্থানগড়ের অবদান:

বাংলাদেশের সমাজ সভ্যতার বিকাশে মহাস্থানগড়ের ভূমিকা অপরিসীম।  নিচে তার কিছু উল্লেখ করা হলো:-

বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হচ্ছে মহাস্থানগড়। পাহাড়পুরের মত এখানেও বৌদ্ধএবং হিন্দুসংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া গেছে। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত প্রত্নতাত্ত্বিক  নিদর্শনের মধ্যে মহাস্থানগড়ই সর্বাধিক প্রাচীন।

প্রাচীন বাংলার তথ্য উদ্ঘাটনে মহাস্থানগড়ের পত্নসম্পদের ঐতিহাসিক গুরুত্ব রয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকে খ্রিস্টীয় ১৫ শতাব্দী পর্যন্ত এখানে একটি সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিকাশ ঘটেছিল। এই সভ্যতায় বৌদ্ধ এবং হিন্দুসংস্কৃতির প্রভাব ছিল। খ্রিস্টীয় ৪র্থ শতকের পরে ক্ষুদ্র কক্ষবিশিষ্ট আবাসন নির্মাণপদ্ধতি প্রাচীন বাঙলার নিজস্ব স্থাপত্যকৌশলের প্রমাণ হাজির করে। বৌদ্ধধর্মের ওপর ব্রাহ্মণ্যধর্মের বিজয় বার্তাকে ধারণ করে মহাস্থানগড়ের একটি মূর্তি নির্মিত হয়েছে। আবিষ্কতৃ প্রস্তরমূর্তিগুলোতে বৌদ্ধ ও হিন্দুধর্মের প্রভাব প্রকট। আবার সুলতান বল্খী মাহীসওয়ারের মাজার মুসলিম আমলের নিদর্শন বহন করে। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের সমাজ ইতিহাস অধ্যয়নের মহাস্থানগড়ের গুরুত্ব অপরিসীম।

বাংলাদেশের সমাজ সভ্যতা বিকাশে প্রত্নতাত্ত্বিক উপকরণসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে নিচে তার কিছু বর্ণনা দেওয়া হল,

মহাস্থানগড়ে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকার্যের মাধ্যমে বহু প্রাচীন নিদর্শন বা  প্রত্নসম্পদ পাওয়া গেছে। যার মধ্যে মধ্যে পাথরের বিষ্ণুমূর্তি, বিভিন্ন আকারের বোতাম ও গুটিকা, নানা রঙের মাটির পাত্র, থালা-বাসন, জলপাত্র, রান্নার হাড়ি-পাতিল, তামা ও ব্রোঞ্জের গহনা, সোনার অলংকার, আংটি ও বালা, পোড়ামাটির মূর্তি ও খেলনা, গোলাকার পোড়ামাাটির সিল, মুদ্রা ও কড়ি, দোয়াত, প্রদ্বীপ, সিরামিক্স উল্লেখযোগ্য। এখানকার স্থাপত্য শিল্প, প্রাচীরের গায়ের জ্যামিতিক নকশা, সিঁড়ি প্রভৃতি প্রাক-মোগল আমলের মুসলিম ঐতিহ্যের ইঙ্গিতবাহী। এখানে প্রাক-মোগল আমলের একটি মসজিদের ধ্বংসাবশেষ, আরবীয় সুফি-সাধক সুলতান মাহীসওয়ার বলখীর মাজার এবং মসজিদ রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় মহাস্থানগড় জৈন, বৌদ্ধ, হিন্দুও মুসলিম সংস্কৃতির সংমিশ্রন।

পরিশেষে বলা যায়,  বাংলাদেশের সমাজ সভ্যতা বিকাশের ক্ষেত্রে মহাস্থানের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

(ঘ) বাংলাদেশের সমাজ সভ্যতা বিকাশে ময়নামতির অবদান:

বাংলাদেশের সমাজ সভ্যতা বিকাশে মহাস্থানগড়ের মত ময়নামতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এ সম্পর্কে কিছু তথ্য উপস্থাপন করা হলো:-

কুমিল্লার ময়নামতি বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্ম ও প্রাচীন সভ্যতার অন্যতম প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন। কুমিল্লা জেলা শহরের সাত কিলোমিটার পশ্চিমে কোটবাড়ি এলাকায় বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন একাডেমি অবস্থিত। এখান থেকে দেড় কিলোমিটার দক্ষিণে ময়নামতির শালবন বিহার ধ্বংসাবশেষ। সমগ্র প্রতœতাত্তি¡ক এলাকাটি ময়নামতি-লালমাই পাহাড়ি অঞ্চলের প্রায় ১১ মাইল এলাকা জুেড় অবস্থিত। শালবন বিহারের সন্নিকটে স্থাপিত যাদুঘরে ময়নামতিতে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নসামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়েছে।

ময়নামতির সমাজ-ঐতিহাসিক তাৎপর্য রয়েছে। ময়নামতির শালবন বিহারে খননের ফলে প্রাপ্ত একটি তাম্রশাসন থেকে দেববংশ নামে এক নতুন বৌদ্ধ রাজবংশ ও তাঁদের বংশানুক্রম পাওয়া যায়। চারপত্র মুড়ায় আবিষ্কতৃ তাম্রশাসনগুলো চন্দ্র রাজাদের বংশানুক্রম, বিভিন্ন অভিযান ও তাঁদের সময়কার সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃিতক অবস্থার পরিচয় তুলে ধরে। এছাড়া এই তাম্রশাসন থেকে জানা যায় যে, শ্রীচন্দ্র থেকে গোবিন্দচন্দ্রের শাসনকাল পর্যন্ত ঢাকার বিক্রমপুের চন্দ্র রাজাদের রাজধানী ছিল। লালমাই-ময়নামতিতে প্রাপ্ত ২২৭টি স্বর্ণ ও রৌপ্যমুদ্রা প্রমাণ করে যে, এখানে মুদ্রা অর্থনীতির প্রচলন ছিল। এখানে আবিষ্কৃত আব্বাসীয় খলিফাদের মুদ্রা মধ্যপ্রাচ্যের সাথে তৎকালীন বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের সাক্ষ্য দেয়। এখানে প্রাপ্ত বৌদ্ধ দেবদেবীর মূর্তিসমূহ বাংলাদেশে বৌদ্ধধর্মের সুবর্ণযুগের পরিচয় বহন করে। শালবন বিহারের ক্রুশাকার মন্দিরের ভিত্তিভূমি অলংকৃত পোড়ামাটির ফলকচিত্রগুলো তৎকালীন বাংলার লোকায়ত শিল্পের উৎকৃষ্ট নিদর্শন। ময়নামতিতে প্রাপ্ত  প্রত্নসামগ্রী তৎকালীন সমাজের গতিপ্রকৃতি বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।  প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে ময়নামতি দক্ষিণ-পূর্ব বাংলার খ্রিস্টীয় ৭ম-১২শ শতাব্দীর শিল্প, সংস্কৃতি ও সভ্যতার ঐতিহাসিক দলিল।

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে এই মত প্রকাশ করা যায় যে, মহাস্থানগড়ের মত ময়নামতি বাংলাদেশের সমাজ সভ্যতার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *