HSC Civics Answer 2021

HSC 2021 3rd Week Civics Assignment Answer 

বিষয়: পৌরনীতি ও সুশাসন 

বাংলায় শিরোনাম:- ১৯৪৭ সালে ভারত এবং পাকিস্তান রাস্ট্র সৃষ্টির প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা।

For English: – The background of the creation of India and Pakistan in 1947 Review.


(ক) ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য :

১) গণ আন্দোলন: ১৯১৯ সালের মন্টফোর্ড সংস্কার আইন ভারতীয়দের আশাআকাঙ্খা পূরণে ব্যর্থ হলে গান্ধীজির নেতৃত্বে ব্যাপক গণ আন্দোলন শুরু হয়।

২) বিপ্লবী কার্যকলাপ: এই সময় ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বিপ্লবী কার্যকলাপ যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। ফলে সরকার আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

৩) জাতীয়তাবাদের প্রভাব: ভারতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী ভাবধারার প্রসার ব্রিটিশ সরকারকে ভাবিয়ে তোলে।

৪) সাইমন কমিশনের রিপোর্ট: ১৯৩০ সালে সাইমন কমিশন ভারতীয়দের স্বায়ত্রশাসন বিষয়ে যে রিপোর্ট দেয তা ভারত শাসন আইন প্রণয়নের পথ খুলে দেয়।

৫) গোলটেবিল বৈঠক: সাইমন কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করে। এই আলোচনা গোলটেবিল বৈঠক নামে পরিচিত। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার সাংবিধানিক সংস্কার করতে বাধ্য হয়।

৬) শ্বেতপত্র প্রকাশ: এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৩ সালে একটি ‘শ্বেতপত্র’ প্রকাশ করতে বাধ্য হয় যার ভিত্তিতে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ১৯৩৫ সালে ভারত শাসন আইন পাশ করে। এই আইনের শর্তাবলী বিশ্লেষণ করলে এর কিছু বৈশিষ্ট্য নজরে পড়ে।


কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে:

১) ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠন: এই আইনে ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হয়। দেশীয় রাজ্যগুলির যুক্তরাষ্ট্রে যোগ দেওয়া ঐচ্ছিক হিসাবে গন্য হয়।

২) দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : কেন্দ্রে পাঁচ বছর মেয়াদি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নিম্নকক্ষ ফেডারেল এসেম্বলি ৩৭৫ জন এবং উচ্চকক্ষ কাউন্সিল অব স্টেট ২৬০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হবে বলে ঘোষিত হয়।

৩) সাম্প্রদায়িক নির্বাচন : মুসলিম ও তফসিল সদস্যদের জন্য পৃথক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়।

৪) মন্ত্রিপরিষদের দায়িত্ব: গভর্নর জেনারেলের অধীনে একটি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিপরিষদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শাসনভার দেওয়া হয়। মন্ত্রীরা কাজের জন্য আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন বলে জানানো হয়।

৫) শাসন ক্ষমতা বিভক্তিকরণ: কেন্দ্রীয় সরকারের শাসন ক্ষমতাকে সংরক্ষিত ও হস্তান্তরিত এই দুভাগে ভাগ করা হয়। প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক, ব্যাংক ইত্যাদি। সংরক্ষিত বিষয়ে গভর্নর জেনারেলের হাতে চুড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়।

৬) গভর্নর জেনারেলের চূড়ান্ত ক্ষমতা: গভর্নর জেনারেল শাসন পরিচালনায়। চূড়ান্ত ক্ষমতা লাভ করেন। এছাড়া ‘সেচ্ছাধীন ক্ষমতা’ ও ‘স্ববিবেচনাপ্রসূত ক্ষমতা’ ভোগ করতেন।

 ৭) কেন্দ্র ও প্রদেশের ক্ষমতার তালিকা: কেন্দ্র ও প্রদেশের মধ্যে ক্ষমতা বন্টনের উদ্দেশ্যে তিনটি পৃথক তালিকা তৈরি করা হয়।

ক) কেন্দ্রীয় তালিকা,

খ) প্রাদেশিক তালিকা,

গ) যুগ্ম তালিকা।

৮) গভর্নর জেলারেলের দায়বদ্ধতা: গভর্নর জেনারেল তার কাজের জন্য সরাসরি ভারত-সচিব ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন।


প্রাদেশিক সরকারের ক্ষেত্রে:

১) স্বায়ন্তশাসন: প্রদেশগুলিতে দ্বৈত শাসনের অবসান ঘটিয়ে স্বায়ন্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়।

২) প্রাদেশিক আইনসভা: বাংলা-সহ ছয়টি প্রদেশে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট এবং অবশিষ্ট পাঁচটি এককক্ষবিশিষ্ট আইনসভা রাখা হয়।

৩) দায়বদ্ধতা: প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য প্রাদেশিক আইনসভার কাছে দায়বদ্ধ থাকবেন।

৪) গভর্নরের দায়িত্ব: কেন্দ্রের অনুকরণে প্রদেশের আইনশৃঙ্খলা, ধর্ম ইত্যাদির দায়িত্ব গভর্নরের হাতে দেওয়া হয়।

৫) গভর্নরের চূড়ান্ত ক্ষমতা: প্রদেশের গভর্নর আইন প্রণয়ন ও নাকচ করার অধিকারী হন।


(খ) দ্বি-জাতি তত্বের তাৎপর্য :

ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন জাতি ও রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে ভারতকে রাজনৈতিকভাবে দ্বিধাবিভক্ত করার নির্ণায়ক আদর্শাশ্রয়ী একটি রাজনৈতিক মতবাদ। ভারত থেকে ব্রিটিশ শাসন অবসানের প্রাক্কালে বিশ শতকের চল্লিশের দশকে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বি- জাতিতত্বের ধারণার উন্মেষ ঘটান। এ তথ্যের ভিত্তিতে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, জিন্নাহর দ্বিজাতি তত্বই ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাব উ্থাপনের ভিত্তি তৈরি করেছিল। কংগ্রেস সভাগতি পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় উপমহাদেশে কেবল দুটি দলের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। একটি হলো কংগ্রেস এবং অপরটি হলো সরকার এবং বাকি দলগুলো কংগ্রেস অন্তর্ভুক্ত। জিন্নাহ উপলব্ধি করেন যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে ঐক্যবদ্ধ থাকলে মুসলমানের স্বার্থ রক্ষা পাবে না। ১৯৪০ সালের ২২ মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অধিবেশনে সভাপতির ভাষণ দ্বিজাতি তত্বের ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। এভাবে, ভারতবর্ষের দুটি পৃথক জাতির বসবাস হিন্দু ও মুসলমান মুসলমানের কৃষ্টি স্বতন্ত্র, কালচার স্বতন্ত্র প্রাপ্ত আশাআকাঙ্খা স্বতন্ত্র, তাদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও স্বতন্ত্র। সুতরাং জাতীয়তা যেকোনো মানদণ্ড অনুযায়ী ভারতের মুসলমানরা একটি জাতি। এভাবে মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়। যার প্রতিফলন ঘটে ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবে। পরবর্তীতে এ দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়।

(গ) লাহোর প্রস্তাবের বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য:

লাহোর প্রস্তাব:


১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের বার্ষিক সম্মেলনে বাংলার কৃতি সন্তান শেরে বাংলা একে ফজলুল হক যে প্রস্তাব পাস করেন সে প্রস্তাব লাহোর প্রস্তাব নামে খ্যাত। লাহোর প্রস্তাবে বলা হয় ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী সন্নিহিত স্থানসমূহকে অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।  প্রয়োজনমতো সীমা পরিবর্তন করে যেসব স্থানে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ সেসব অঞ্চলসমূহের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এসব স্বাধীন রাস্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলো হবে স্বয়ত্তশাসিত সার্বভৌম। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট ভারত বিভক্ত হয়ে দুটি রাষ্ট্রের রূপান্তরিত হয়।

 

বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য :

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে All India Muslim League  – এর ভবিষ্যৎ কর্মসূচি নির্ধারণে জন্য যে অধিবেশন আহ্বান করা হয় ঐ অধিবেশনের লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হয়।

নিচে লাহোর প্রস্তাবের মূল বৈশিষ্ট্য সমূহ তুলে ধরা হলো-

১. ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে এর উত্তরপশ্চিম ও পূর্ব অঞ্চলে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা গুলো নিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে হবে।

২. উল্লিখিত স্বাধীন রাষ্ট্র সমূহের অধীন ইউনিট বা প্রদেশগুলো স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম হবে।

৩. ভারতের অন্যান্য হিন্দু অঞ্চলগুলোর সমন্বয়ে পৃথক হিন্দু রাষ্ট্র গঠিত হবে।

৪. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রস্তাবের তাৎপর্য সাথে পরামর্শ ভিত্তিতে তাদের স্বার্থ অধিকার ও রক্ষার জন্য সংবিধানের পর্যাপ্ত ক্ষমতা রাখতে হবে।

৫. প্রতিরক্ষা, পরস্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে ক্ষমতা সংশিষ্ট অঙ্গরাজ্যগুলোর উপর ন্যস্ত থাকবে।

তাৎপর্য

ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব অবিভক্ত ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনন্যসাধারণ ভূমিকা পালন করে। লাহোর প্রস্তাব গৃহীত হবার পর মুসলীম লীগের রাজনীতিতে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ উপস্থিত হয়। মুসলমানের মধ্যে ধর্মভিত্তিক জাতীয়তা বোধ জাগ্রত হয়। অপরদিকে হিন্দুরা লাহোর প্রস্তাবকে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেনি। গান্ধীর মতে, লাহোর প্রস্তাব মেনে নেওয়ার অর্থ ‘ভারতকে ব্যবচ্ছেদ করা এবং তা হবে একটি পাপ কাজ।

জওহরলাল নেহেরু বলেন, লাহোর প্রস্তাব মেনে ভারত হয়ে পড়বে বলকান রাস্ট্রগুলোর ছোট ছোট রাস্ট্রে বিভক্ত কর্তৃত্ববাদী পুলিশী রাষ্ট্র। লাহোর প্রস্তাব কে মুসলিম লীগ বিরোধী পত্রিকাগুলো ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ বলে অভিহিত করে সমালোচনা শুরু করে। তাদের অপবাদই পরে মুসলিম লীগের জন্য সুবাদে পরিণত হয়। লাহোর প্রস্তাব পাকিস্তান প্রস্তাব’ নামে পরিচিতি অর্জন করে। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতেই ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠিত হয়।

(ঘ) ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইনের প্রেক্ষাপট ও বৈশিষ্ট্য :

১৯৪৭ সালের ৩ জুন লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারত স্বাধীনতা আইনের পরিকল্পনা করেন, যা ১৯৪৭ সালের ১৮ জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাশ হয়। নিচে ভারত স্বাধীনতা আইনের বৈশিষ্ট্যগুলো দেওয়া 

০১/ স্বাধীন পৃথক রাষ্ট্রের সৃষ্টি: এই আইনের ফলে ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত নামে। দুটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় এবং তারা ডোমিনিয়ন মযাদা লাভ করে।

০২/ নতুন প্রদেশ সৃষ্টি: পূর্ব-বাংলা এবং পশ্চিম বাংলা নাম দটি আলাদা প্রাদশের সৃষ্টি হয়।

০৩। ব্রিটিশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার: “ভারত আইন” অনুযায়ী ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে ভারতীয় উপমহাদেশে ব্রিটিশ সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ বা কর্তৃত্ব থাকবে না। 

০৪। গভর্নর জেনারেল নিয়োগ ও ভারত সচিবের বিলুপ্তি: নবগঠিত রাষ্ট্রসমূহের জন্য পৃথক গভর্নর জেনারেল হবেন রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তি। এটার মাধ্যমে ভারতে সচিবের পদ বিলুপ্ত করা হয়।

০৫। গভর্নর জেনারেল ও গভর্নরের ক্ষমতা হ্রাস: ভারত স্বাধীনতা আইনে গভর্নর জেনারেল এবং গভর্নরের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা, বিচার-বুদ্ধিজনিত হয়ে থাকে ।

০৬। আইন কার্যকরীর সময়: ১৯৪৮ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে এই আইনের বিভিন্ন ধারা কার্যকর করতে হবে।

০৭। ব্রিটিশ রাজার “ভারত সম্রাট উপাধি বিলোপ: ভারত স্বাধীনতা আইন কার্যকর হওয়ার সাথে সাথে ব্রিটিশ রাজার ভারত সম্রাট উপাধি বিলুপ্ত হয়ে যায়। সুতরাং, বলা যায় যে- ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৪৭ সালের ভারত স্বাধীনতা আইন একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এ আইনের ফলেই ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *