HSC Finance, Banking & Insurance Assignment Answer 3rd week 2021
HSC Finance, Banking & Insurance Assignment Answer 3rd week 2021
ব্যাংকের ধারণা:
ব্যাংক এমন একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান যেটি এক পক্ষের কাছ থেকে আমানত হিসাবে অর্থ জমা রাখে এবং অন্য পক্ষকে আমানতি অর্থ থেকে ঋণ দেয়। ব্যাপক অর্থে, ব্যাংক হলো এমন একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান (Financial Intermediary) যা আমানত গ্রহণ করা, ঋণ দেওয়া এবং ঋণ ও অর্থ সৃষ্টি করা সহ, বিভিন্ন ধরনের আর্থিক কাজ সম্পন্ন করে । (Cairncross – এর মতে, ব্যাংক একটি আর্থিক মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান, যেটি ধার ও ঋণের ব্যবসায় করে (A Bank is a Financial intermediary, a dealer in loans and febts). Chambers আরো ব্যাপকভাবে ব্যাংকের সংজ্ঞা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন: ব্যাংক একটি কার্যালয় বা প্রতিষ্ঠান যার কাজ হলো অর্থ গ্রহণ, ঋণদান এবং বিনিময় কার্যাদি সম্পন্নকরণ (A Bank is an office or institution for the keeping, lending and exchange of Money) ১৯৪৯ সালে ভারতীয় ব্যাংক আইন অনুসারে, ব্যাংক হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যা ঋণ দেওয়া বা বিনিয়োগ করার উদ্দেশ্যে জনগণের কাছ থেকে আমানত হিসেবে অর্থ গ্রহণ করে, যে অর্থ চাহিবামাত্র বা অন্যভাবে ফেরত দিতে হয় এবং যা চেক, ড্রাফ্ট্ বা অন্যভাবে উঠিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা থাকে।
ব্যাংক ব্যবসায়ের প্রকৃতি: অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সাথে মিল রেখে বিশ্বের-বিভিন্ন দেশে-বিভিন্ন মালিকানায় ব্যাংক গঠিত হয়েছে ৷ নিচে মালিকানার ভিত্তিতে ব্যাংকের ৪টি শ্রেণিবিভাগ আলোচনা করা হলো ।
১। সরকারী ব্যাংক : সরকার নিজে ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারে। কোন ব্যাংক সরকারী মালিকানায় পরিচালিত, সংগঠিত ও নিয়ন্ত্রিত হলে তাকে এ দেশের সরকারী ব্যাংক বলে। সরকারী ব্যাংক সরকারের নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয়। আমাদের দেশে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী, ব্যাংক, অগ্ণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ইত্যাদি সরকারী ব্যাংকের উদাহরণ । এ ব্যাংকগুলোর মালিক সরকার নিজে।
২। বেসরকারী ব্যাংক: ব্যক্তি মালিকানায় বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত ব্যাংককে বেসরকারী ব্যাংক বলে। বেসরকারী ব্যাংকগুলোকে: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভূক্ত হতে হয়। বাংলাদেশে ন্যাশনাল ব্যাংক লিঃ, এবি ব্যাংক লিঃ, ইসলামী ব্যাংক. লিঃ, দি-সিটি-ব্যাংক লিঃ ইত্যাদি বেসরকারি ব্যাংকের উদাহরণ ।
৩। যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংক : যে ব্যাংক সরকারী ও বেসরকারী যৌথ মালিকানায় গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয়, তাকে সরকারী ও বেসরকারী যৌথ মালিকানাধীন ব্যাংক বলে। পুবালী ব্যাংকের ৫১% শেয়ার সরকারী মালিকানায় এবং ৪৯% শেয়ার বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে। সুতরাং পৃবালী ব্যাংককে. একটি.যৌথ. মালিকানাধীন ব্যাংক বলা যায়।
৪। স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক: যে ব্যাংক সরকারের বিশেষ আইন বলে গঠিত হয় এবং স্বাধীনভাবে সরকারের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়াই নিয়ন্ত্রিত হয় তাকে স্বায়ত্তশাসিত ব্যাংক বলে। যেমন- বাংলাদেশ উন্নয়ন ব্যাংক লিঃ, বাংলাদেশ ব্যাংক । এগুলো সরকার গঠন করেছে। কিন্তু পরিচালিত হয় নিজস্ব আইন দ্বারা।
ব্যাংকের শ্রেণিবিভাগ: কাজের ভিত্তিতে বিভিন্ন ধরনের ব্যাংকের বিবরণ দেওয়া হল:
১) কেন্দ্রীয় ব্যাংক : কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেশের সব ব্যাংকের মুরব্বি, পরিচালক ও নিয়ন্ত্রক। গোটা ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রাণকেন্দ্র। কেন্দ্রীয় ব্যাংক (Central Bank) মুদ্রাবাজারকে সুসংগঠিত আকারে পরিচালিত করার উদ্দেশ্যেই গঠিত। সাধারণত মুদ্রা প্রচলন, অর্থ সরবরাহ তথা ঋণ নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতা ও দায়িত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়োজিত। বাংলাদেশে বাংলাদেশ ব্যাংক, ইংল্যাণ্ডে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড, জাপানে ব্যাংক-অব-জাপান কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসাবে কাযরত রয়েছে।
২) বাণিজ্যিক ব্যাংক : মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্য জনগণের সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসাবে গ্রহণ এবং সে আমানত হতে ঋণ প্রদান কাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংককে বাণিজ্যিক ব্যাংক (Commercial Bank) বলা হয়। যেমন: ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড ।
৩) উন্নয়ন ব্যাংক : এই ব্যাংকের উদ্দেশ্য হল বিভিন্ন খাতের উন্নয়ন করা.। কৃষির উন্নয়নের জন্য কৃষি খাতে ঋণ দেওয়া। যেমন-
ক) কৃষি ব্যাংক : কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে যে ব্যাংক কাজ করে, তাকে কৃষি ব্যাংক বলে। এটি একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। আমাদের কৃষি উন্নয়ন অনেকখানি নির্ভর করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের দক্ষতার উপর।
খ) শিল্প, ব্যাংক: দেশের শিল্প খাতে উন্নয়নের লক্ষ্যে যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে শিল্প ব্যাংক বলে । যন্ত্রপাতি সংগ্রহ, ভূমি ক্রয়, কারখানা নির্মাণ ইত্যাদির জন্য শিল্প ব্যাংক ঋণ প্রদান করে থাকে । বিডিবিএল (Bangladesh Development Bank Limited) বাংলাদেশে এই ধরনের একটি ব্যাংক।
গ) ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক: ক্ষুদ্রশিল্পের উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করে শিল্পায়ন তরান্বিত করার জন্য ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প ব্যাংক. আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে।
ঘ) আঞ্চলিক ব্যাংক: কোনো অঞ্চল বিশেষের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য যে ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকে আঞ্চলিক ব্যাংক (Regional Bank) বলা হয়। যেমন- রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ।
ঙ) ধর্মীয় ব্যাংক: ধর্মীয় দৃষ্টিকোণভিত্তিক ব্যাংক বিভিন্ন ধর্ম তাদের ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে ধর্মীয় অনুশাসন প্রয়োগকল্পে যে ব্যাংকগুলো প্রতিষ্ঠিত হয়, তাদের ধর্মীয় ব্যাংক বলে। ইসলামি শরিয়া অনুযায়ী দেশের, প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম জনগোষ্ঠীকে সেবা দানের লক্ষ্যে ১৯৮৩ সালে সর্বপ্রম বাংলাদেশে বেসরকারি ব্যাংক হিসাবে ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার প্রবর্তন হয়। অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের সাথে সেবা প্রধানের সামঞ্জস্য থাকলেও ইসলামি ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আমানত গ্রহণ ও ঋণ প্রদানের নিম্নলিখিত পণ্য ও সেবা দেখতে পাওয়া যায়।
১) ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
২) আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
৩) সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
৪) এক্সিম ব্যাংক লিমিটেড
৫) শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশে প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার সম্পর্ক: একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন যে কয়টি বিষয়ের উপরে নির্ভরশীল ব্যাংক ব্যবস্থা তাদের মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নই দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। ব্যাংক ব্যবস্থা দেশের কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি, বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রের উন্নয়নেই প্রভার বিস্তার করে থাকে। আমাদের দেশ মূলত কৃষি নির্ভর হলেও শিল্পায়ন এদেশের মুলধন গঠন করে এবং তা কৃষি, শিল্প, প্রযুক্তি ও বাণিজ্যসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। বিশেষায়িত ব্যাংকের পাশাপাশি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও এই দায়িত্ব পালন করে থাকে।
১) ঋণ প্রদান: ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বড় ব্যবসায়ীদের. স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দিয়ে দেশের আভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাণিজ্যে সহযোগিতা করে ।
২) বিনিময়ের মাধ্যম সৃষ্টি: ব্যাংক বিভিন্ন ধরনের বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি করে আর্থিক বিনিময়কে সহজ ও ঝুঁকিমুক্ত করায় খুব সহজেই দেশ থেকে দেশে অল্প সময়ে ব্যবসায়ীক দেনা পাওনা পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে। যেমন চেক, পে-অর্ডার, ড্রাফট ইত্যাদি অর্থের মতোই বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
৩) ব্যাংকের বিশেষায়ণ: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত ব্যাংক বহুমুখী বিশেষায়িত সেবা দিয়ে থাকে। যেমন কৃষি ব্যাংক কৃষি খাতের উন্নয়নে স্বল্প মেয়াদী ও দীর্ঘ মেয়াদী ঝণ দিয়ে থাকে, বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক সহজ শর্তে শিল্প ঋণ দিয়ে থাকে এবং বাণিজ্যিক থাকে।