SSC 2021 Civics Assignment Answer 4th Week

SSC Civics Assignment Question 2021 4th Week



SSC Civics Assignment Answer 2021 4th Week

পৌরনীতি ও সুশাসন এসাইনমেন্ট সমাধান

শিরোনাম: রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রের উপাদান, রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ এবং রাষ্ট্র ও সম্পর্ক বিশ্লেষণ।


(ক) রাষ্ট্র ও রাস্ট্রের উপাদান

রাষ্ট্রের ধারণা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মুল প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র। বিভিন্ন লেখক ও চিন্তাবিদ বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন । রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিস্টটল রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, “পরিপূর্ণ ও স্বনির্ভর জীবন গঠনের উদ্দেশ্যে কতিপয় পরিবার ও গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠনই রাষ্ট্র” প্রাচীন চিন্তাবিদদের রাষ্ট্র সংক্রান্ত আলোচনা মুলত আদর্শ ভিক্তিক ও নগর রাষ্ট্র কেন্দ্রিক। উড্রো উইলসনের মতে “কোন নির্দিষ্ট ভূ-খান্ডে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে।” রাষ্ট্র সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করা যায় অ ধ্যাপক গার্নারের প্রদত্ত সংজ্ঞা থেকে । তাঁর মতে “রাষ্ট্র হলো কম বা বেশী এমন একটি জনসমাজ যারা একটি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, বাইরের নিয়ন্ত্রণ থেকে যুক্ত এবং যাদের একটি সুসংগঠিত সরকার আছে যার প্রতি অধিকাংশ অধিবাসী সাধারণত আনুগত্য পোষণ করে ।” রাষ্ট্র বিজ্ঞানী হ্যারন্ড লাক্ষি বলেন “রাষ্ট্র একটি ভৌগোলির সমাজ যা শাসক- শাসিতের মধ্যে বিভক্ত এবং সকল সংস্থার উপর স্বীয় কর্তৃত্ব দাবি করে।” বন্টুসলির মতে কোন নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত জনসমাজই রাষ্ট্র। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলমন্ড ও কোলম্যান তাদের ` Politics of Developing Areas’ গ্রন্থে ‘রাষ্ট্র’ শব্দটির পরিবর্তে “রাজনৈতিক ব্যবস্থা’ কথাটি ব্যবহার করেছেন । তাদের মতে রাজনৈতিক ব্যবস্থা হলো সমাজের বৈধ শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বা পরিবর্তন আনয়নকারী ব্যবস্থা।

রাষ্ট্র গঠনের উপাদানসমূহ: রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে ভিন্নতা থাকলেও, রাষ্ট্রের চারটি মৌলিক উপাদানের ব্যাপারে সবাই একমত । অধ্যাপক গার্নারের সংজ্ঞা বিশ্লেষণ করলে আমরা চারটি উপাদান লক্ষ্য করি যথা. 

১। জনসমষ্টি; 

২। নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড 

৩। সরকার;

৪। সার্বভৌমত্ব

জনসমষ্টি: রাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান উপাদান হল জনসমষ্টি। জনসমষ্টি ছাড়া রাষ্ট্রকে কল্পনা করা যায় না। কোন ভূ-খন্ডের একটি জনসমষ্টি স্থায়ীভাবে বসবাস করলেই কেবল রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে। রাষ্ট্রের জনসমষ্টি এমন হওয়া উচিত যাতে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনায় জনশক্তির অভাব না ঘটে। প্রাচীন গ্রীক রাষ্ট্রচিন্তাবিদগণ মনে করতেন যে স্বল্প জনসংখ্যা সুশাসনের পক্ষে অপরিহার্য । নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড: নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড ছাড়া কোন রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না। জনসমষ্টি যেমন রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য তেমনি নির্দিষ্ট ভূ-খন্ড রাষ্ট্রের গুরুত্বপর্ণ উপাদান | ভূ-খন্ড বলতে  শুধুমাত্র স্থলভাগকে বুঝায় না। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে নদ-নদী, মহাসাগরের জলসীমা এবং উপরস্থ আকাশ সীমাকে  বুঝায় । রাষ্ট্রের আয়তন বড় হতে পারে । আবার ছোটও হতে পারে। রাষ্ট্রের ভূ-খন্ড অখন্ড হতে পারে আবার খন্ডিত হতে পারে। এমনকি কতকগুলো দ্বীপের সমষ্টি হতে পারে ।

সরকার: রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান হল সরকার। সরকার বলতে সেই সুগঠিত সংগঠনকে বুঝায় যারা আইন প্রণয়ণ,  শাসন ও বিচার বিভাগীয় কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট । সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে। সরকার শাসনতন্ত্রের মাধ্যমে বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে। সরকার রাষ্টের ইচ্ছাকে কাযে পরিণত করে থাকে । আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার হচ্ছে জনগণের প্রতিনিধি ।

সার্বভৌমত্ব: রাষ্ট্রের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান উপাদান হল সার্বভৌমত্ব । রাষ্ট্রের চরম ও, সর্বোচ্চ ক্ষমতাই হলো সার্বভৌমত্ব। সার্বভৌমত্বের কারণেই একটি জনসমাজ রাষ্ট্রে পরিণত হয়। সার্বভৌম ক্ষমতার বলে রাষ্ট্র এর অধীনস্থ সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের উপর আদেশ নির্দেশ প্রদান করতে পারে। সার্বভৌম ক্ষমতার দুটি দিক আছে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক।

(খ)  উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ: 

১। ঐশি মতবাদ: ঐশ্বরিক মতবাদ ঐশ্বরিক বা বিধাতার সৃষ্টি মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদের মধ্যে সবচেয়ে পুরাতন। এ মতবাদের মূল কথা হলো, রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে ঈশ্বর বা বিধাতার ইচ্ছানুযায়ী । রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব নেই। সমগ্র পৃথিবীর শাসনকর্তা সত্যিকার অর্থে সৃষ্টিকর্তা । তবে সৃষ্টিকর্তা নিজে রাষ্ট্র শাসন করেন না। তিনি প্রতিনিধির মাধ্যমে রাষ্ট্র শাসন করেন। শাসক বা রাজা হলো ঈশ্বরের প্রতিনিধি । সৃষ্টিকর্তাকে যেমন অমান্য করা যায় না, তদ্রুপ তার প্রতিনিধি রাজাকেও অমান্য বা তুচ্ছ করা যায় না। মুলত রাজা বা শাসকের আদেশ-সৃষ্টিকর্তারই নির্দেশ। রাজাকে অবমাননা করা মানেই সৃষ্টিকর্তাকে অবমাননা করা। শাসন করার ক্ষেত্রে রাজা ঈশ্বর ছাড়া আর কারো কাছে দায়বদ্ধ নয়। এ কারণে রাজার স্থায়ীত্ব জনগণের ওপর নির্ভরশীল নয়। শাসকগণ একইসঙ্গে রাষ্ট্রপ্রধান এবং ধর্মীয় প্রধান। মধ্যযুগের রাষ্ট্রচিন্তাবিদ সেন্ট অগাস্টিন মূলত এই চিন্তার প্রবক্তা ।

২। বল পয়োগ মতবাদ: বল প্রয়োগ মতবাদের সারকথা হলো- রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়েছে শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে। এই মতবাদে অধিকারী ছিল তারা বল পয়োগ করে নিজ গোত্র বা গোষ্ঠীর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করত । কালক্রমে খাদ্য ও বাসস্থানের চাহিদার কারণে শক্তিশালী গোত্র আবার অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী গোত্রের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করত। আর এভাবে সবলরা অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের ওপর শক্তি প্রয়োগ করে আইন-কানুন চাপিয়ে দিয়ে রাষ্ট্র গঠন করেছে। অর্থাৎ বৃহত্তর সমাজ শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রে রূপান্তরিত হয়েছে । এই মতবাদ অনুযায়ী শক্তি হলো রাষ্ট্রের মূল ভিত্তি।

৩। সামাজিক চুক্তি মতবাদ: সামাজিক চুক্তি মতবাদ রাষ্ট্রের উৎপত্তির ক্ষেত্রে একটি কাল্পনিক মতবাদ। এই মতবাদের মূল কথা হলো – সৃষ্টির শুরুতে বা আদিম সমাজে মানুষ প্রকৃতির রাজ্যে বাস করত। প্রকৃতির রাজ্যের মানুষ প্রাকৃতিক আইন মেনে চলতো এবং তারা কিছু প্রাকৃতিক অধিকার ভোগ করত । কিন্তু প্রাকৃতিক আইন ও অধিকার সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যাখ্যার ফলে প্রকৃতির রাজ্যে মানুষের বসবাস দুর্বিষহ হয়ে ওঠে । এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রকৃতির রাজ্যের অধিবাসীরা নিজেদের মধ্যে চুক্তি করে রাষ্ট্র গঠন করে । একই সঙ্গে একজন ব্যক্তি অথবা একটি কর্তৃপক্ষকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার অর্পণ করে। যেহেতু রাষ্ট্র চুক্তির মাধ্যমে গড়ে উঠেছে সেহেতু এ মতবাদকে সামাজিক চুক্তি মতবাদ ( Social Contract theor) বলে। সপ্তদশ শতাব্দীতে টমাস হবস তার বিখ্যাত “লেভিয়াথান’ গ্রন্থে এ বিষয়ে আলোচনা করেন।

৪। ঐতিহাসিক বা বিবর্তনমূলক মতবাদ: রাষ্ট্রের উৎপত্তি সংক্রান্ত মতবাদ গুলোর মধ্যে এ মতবাদ সবচেয়ে আধুনিক, যুক্তিযুক্ত ও গ্রহণযোগ্য মতবাদ । বিবর্তনমূলক মতবাদের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উৎপত্তির সবচেয়ে সঠিক বর্ণনা পাওয়া যায়। এ মতবাদের মূল কথা হলো, রাষ্ট্র কোন একটি বিশেষ কারণে হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়নি। বহু যুগের বিবর্তনের ফল রাষ্ট্র। পরিবার কিংবা সমাজ থেকে রাষ্ট্রের বিবর্তনে কতকগুলো উপাদান কাজ করেছে। অধ্যাপক গার্নার, বার্জেস, গেটেলসহ প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রের উদ্ভবের ক্ষেত্রে এ মতবাদকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে রায় দিয়েছেন।

সরকারের ধারণা: যে চারটি উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হল সরকার । সরকার ব্যতীত রাষ্ট্র পরিচালনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রের কর্মকান্ড সরকারের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয় । সরকার হল একটি বাস্তব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। একে রাষ্ট্রের মুখপাত্রও বলা হয়। বৃহৎ অর্থে সরকার গঠিত হয় সকল নাগরিকের সম্মতিক্রমে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নির্বাচকমন্ডলী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন বা পরিবর্তন করে থাকে । যে চারটি উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হয় তার মধ্যে অন্যতম একটি উপাদান হল সরকার । সরকার ব্যতীত রাষ্ট্র পরিচালনা করা অসম্ভব। রাষ্ট্রের কর্মকান্ড সরকারের মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়। সরকার হল একটি বাস্তব রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান । একে রাষ্ট্রের মুখপাত্রও বলা হয়। বৃহৎ অর্থে সরকার গঠিত হয় সকল নাগরিকের সম্মতিক্রমে । গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নির্বাচকমন্ডলী তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সরকার গঠন বা পরিবর্তন করে থাকে। উপরোক্ত চারটি মৌলিক উপাদান ব্যাতীত রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না।

(গ) রাষ্ট্রের সাথে সরকারের সম্পর্ক:  রাষ্ট্র ও সরকারের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান । প্রাচীনকালে রাষ্ট্র ও সরকারকে একই অর্থে ব্যবহার করা হত। আপাত দৃষ্টিতে রাষ্ট্র ও সরকার শব্দ দুটি সমার্থক মনে হলেও উভয়ের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান । রাষ্ট্র একটি বিমূর্ত ধারণা ৷ আর সরকার সেই ধারণার বাস্তব  সংগঠন। রাষ্ট্র একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিষ্ঠান। চারটি অন্যতম উপাদান নিয়ে রাষ্ট্র গঠিত। এর একটিকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্র গঠিত হতে পারে না । আর সরকার রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের একটি উপাদান। এদের মধ্যে সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য ৷ অধ্যাপক গার্নার বলেন, ‘‘রাষ্ট্রকে যদি জীবদেহ মনে করা হয় তাহলে সরকার হলো এর মস্তিষ্ক।” তবে রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। নিম্নে তা আলোচনা করা হলো:

১। সরকার রাষ্ট্রের চারটি উপাদানের একটি 

২। রাষ্ট্র স্থায়ী, সরকার অস্থায়ী ও পরিবর্তনশীল ।

৩। সরকার বাস্তব প্রতিষ্ঠান, রাষ্ট্র বিমূর্ত ধারণা ।

৪। রাষ্ট্র মোট জনসমষ্টি নিয়ে গঠিত। সরকার  মোট জনসমষ্টির একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে গঠিত।

৫। সরকারের বিভিন্ন রূপ হতে পারে, কিন্তু রাষ্ট্রের কোন পরিবর্তন সম্ভব নয়।

৬। রাষ্ট্রের শাসন কার্য পরিচালনার জন্য সরকার পরিবর্তন হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের পরিবর্তন হয় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *